SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - স্বাস্থ্য সুরক্ষা - NCTB BOOK

শৈশব থেকে আমরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক ও পরিবেশের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি। বেড়ে ওঠার এ যাত্রা প্রত্যেকের জন্যই ভিন্ন হয়। এ ভিন্নতা আমাদের চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণের। পারস্পরিক যোগাযোগে এই ভিন্নতাগুলো ধরা পড়ে। আমাদের এই ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য বিবেচনায় রেখে যোগাযোগ করা কিন্তু সব সময় সহজ নয়। কিছু পরিস্থিতিতে আমরা সহজেই নিজের অনুভূতি ও প্রয়োজন প্রকাশ করতে পারি, অন্যের অনুভূতি ও প্রয়োজন বুঝে আচরণ করতে পারি। আবার কিছু পরিস্থিতিতে বা কিছু ব্যক্তির সাথে এ কাজটি সহজ নয়। অনেক সময় আমরা নিজের প্রয়োজন যেভাবে প্রকাশ করি, তা অন্যের পক্ষে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে আমাদের যোগাযোগের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। পারস্পরিক সম্পর্কেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে যত ভালোভাবে নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও প্রয়োজন প্রকাশ করতে পারব তা আমাদের ভালো থাকা এবং অন্যের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

যোগাযোগের সময় আমরা কীভাবে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ উপায়ে ও সহমর্মী হয়ে নিজের প্রয়োজন প্রকাশ করতে পারি এ অধ্যায়ে আমরা শেখার চেষ্টা করব।

দলগত কাজ

একটি দলগত কাজ দিয়ে এই অধ্যায়টি শুরু করা যাক। ছোট দলে নিজের একটি অভিজ্ঞতার নিয়ে আলোচনা করি। সেখানে যা যা উল্লেখ করব সেগুলো হলো :

১. আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

২. ঘটনার ফলে আমার কী কী চিন্তা ও অনুভূতি হয়েছিল?

৩. আমি তখন কী আচরণ করেছিলাম? 

আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করেছি। সেই ঘটনায় আমাদের আচরণ ও যোগাযোগ সম্পকেও ধারণা পেয়েছি। এবার একটি গল্প পড়ি এবং সেটিকে বিশ্লেষণ করি।

গল্প বিশ্লেষণ করি

রূপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীকে দলগত একটি অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। আকলিমা, অনিমেষ, মানহা এবং নুথুয়াই মারমা-এই চারজন এক দলে পড়ল। দলগত কাজ কীভাবে করবে, প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট কাজ কী কী হবে এবং উপস্থাপনা করবে তা নিয়ে তারা আলোচনা করছে।

গল্পটি পড়া হলো। নিচের ছকের প্রশ্নগুলো পড়ে গল্প অনুযায়ী উত্তর তৈরি করি। কাজ শেষে উত্তরগুলো নিয়ে বন্ধুর সাথে আলোচনা করি এবং আলোচনা শেষে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে করি। কিছু নমুনা উত্তর করে দেওয়া হলো :

চিন্তা, অনুভূতি, আচরণ ও যোগাযোগের মধ্যে সম্পর্ক

যখন কোনো ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের মনে বিভিন্ন রকমের চিন্তা আসে। এ চিন্তা থেকেই আমাদের মধ্যে বিভিন্ন অনুভূতি তৈরি হয়। এই অনুভূতিগুলো আমরা বিভিন্ন আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করি। আমরা পঞ্চম অধ্যায়ে এই ধারণা পেয়েছি। এবার এই আচরণটির মধ্য দিয়ে আমাদের যোগাযোগের ধরনটি কীভাবে প্ৰকাশ পায়, এ অধ্যায়ে তা শিখব। যেমন : ক্লাসে আমার বন্ধু আমার পাশে বসেনি। এতে আমার মনে চিন্তা আসে যে সে আমাকে আর পছন্দ করে না, এতে আমার কষ্ট লাগে। এ কষ্ট থেকে আমি তার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিই। নিচের ছকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

এই উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারছি, কোনো ঘটনার নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। ঘটনাটি নিয়ে আমরা যেভাবে চিন্তা করি, তার ভিত্তিতেই ঘটনার অর্থ তৈরি হয়। যেমন একই ঘটনায় আমার ও আমার বন্ধুর চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণে মিল নাও থাকতে পারে।

একই সাথে, আমরা এটাও জেনেছি যে কোনো অনুভূতি আলাদাভাবে ভালো বা খারাপ নয়। অনুভূতিটি আমরা যে আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করছি, সেটি পরিবেশ-পরিস্থিতিভেদে ভালো বা খারাপ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। তাই, যেকোনো ঘটনায় আমরা কী আচরণের মাধ্যমে নিজের চিন্তা ও অনুভূতি প্রকাশ করছি তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যোগাযোগের সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখব?

আমাদের চিন্তা ও অনুভূতিগুলোকে ইতিবাচকভাবে আচরণে প্রকাশ করা সবসময় সহজ নয়। যে কারও সাথে যোগাযোগের সময় নিচের ৪টি বিষয় যথার্থভাবে প্রকাশ করতে পারা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দক্ষতা :

১. আমার পর্যবেক্ষণ 

২ . পর্যবেক্ষণের ফলে আমার চিন্তা ও অনুভূতি 

৩. চিন্তা ও অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত প্রয়োজন 

8. সেই প্রয়োজন পূরণের উপায়

 

১. পর্যবেক্ষণ 

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের যত ধরনের যোগাযোগ হয় তা আমরা বাচনিক অর্থাৎ ভাষার মাধ্যমে যেমন প্রকাশ করি, তেমনি অবাচনিকভাবে যেমন; গলার স্বর, মুখভঙ্গি ও আচরণের মাধ্যমেও প্রকাশ করি। সাধারণত, অবাচনিক উপায়েই আমাদের বেশিরভাগ যোগাযোগ প্রকাশ পায়। অনেক সময় আমরা অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ না করলেও, আমাদের অবাচনিক আচরণে তা প্রকাশ পায়। যেমন : কোনো কারণে আমার মন খারাপ থাকলে আমি হয়তো মুখে না বললেও আমার গলার স্বর, মুখভঙ্গি ও আচরণ থেকে কেউ কেউ তা বুঝে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে আমার প্রকাশের সাথে আমার ভাই বা বোনের প্রকাশের ভিন্নতা থাকতে পারে। তাই আমার ভাই, বোন, বন্ধু বা কাছের মানুষের সাথে যোগাযোগের সময় সে কী বলছে তা লক্ষ করব। এর পাশাপাশি তার অবাচনিক আচরণগুলো পর্যবেক্ষণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যত ভালোভাবে অন্যের বাচনিক এবং অবাচনিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করব, তার চিন্তা, অনুভূতি এবং প্রয়োজন বোঝার কাজটি তত সহজ হবে। একই সাথে নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও প্রয়োজন সম্পর্কেও সচেতনভাবে প্রকাশ করতে পারব। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এ ধাপে শুধু যা দেখেছি এবং শুনেছি তাই প্রকাশ করব। নিজের ব্যক্তিগত অনুমান, বিশ্বাস বা মতামতের সাথে মিলিয়ে প্রকাশ করব না। যেমন : দলগত কাজ করার সময় রতনের পাশের বন্ধু তার কথার মাঝে কয়েকবার কথা বললে, রতনের মনে হয় তার বন্ধু তাকে কথা বলতে দিতে চায় না বা সে কোথাও ভুল করেছে। সে বিরক্ত বোধ করে। রতন তখন বন্ধুকে বলে ‘আমার কথা শেষে তোমার মতামত দিও'।

রতন যেভাবে তার পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করতে পারত : ‘তুমি ৩-৪বার আমার কথার মাঝে কথা বলছিলে'।

খেলা : আচরণ পর্যবেক্ষণ

পর্যবেক্ষণের বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা এখন একটি খেলা খেলব।

অনুভূতির তালিকা : আনন্দ, গর্ব, ভয়, রাগ, বিরক্তি, অবাক, দ্বিধা, হতাশা, কষ্ট, তৃপ্তি, উদ্বেগ, ক্লান্তি, প্রশান্তি, কৌতূহল। আমরা অনুভূতিগুলোর অভিনয় দেখলাম।

অভিনয় দেখে প্রত্যেকে নিচের ছকটি পূরণ করি।

আমার পূরণ করা ছকটি বন্ধুদের সাথে মিলিয়ে নিই : 

ক. একই অভিনয় দেখে সবাই কি একই নাকি ভিন্ন অনুভূতিও শনাক্ত করেছে? 

খ. একই অভিনয় দেখে আমার সাথে অন্যদের পর্যবেক্ষণে কী কী মিল ও পার্থক্য হয়েছে? আমরা এখন আরেকটি খেলায় অংশগ্রহণ করব।

২. পর্যবেক্ষণের ফলে আমার কী চিন্তা ও অনুভূতি হচ্ছে :

পর্যবেক্ষণের ফলে নিজের ও অন্যের যে অনুভূতি হচ্ছে তা চিহ্নিত করে প্রকাশ করব। তবে চিন্তা থেকে অনুভূতিকে পার্থ্যক্য করা সহজ নয়। তাই লক্ষ রাখতে হবে অনুভূতি প্রকাশের সময় অন্যের প্রতি দোষারোপ প্রকাশ করে এমন কোনো ভাষা ব্যবহার করব না।

যেমন : আগের উল্লেখ করা রতনের ঘটনায় সে যেভাবে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারত : ‘যখন তুমি ৩-৪ বার আমার কথার মাঝে কথা বলছিলে, তখন আমি বিরক্ত হয়েছি'।

যেভাবে চিন্তা প্রকাশ করা এড়িয়ে চলব : রতনের ক্ষেত্রে সে এভাবে কথা বলা এড়িয়ে চলতে পারে : ‘যখন তুমি ৩-৪ বার আমার কথার মাঝে কথা বলছিলে, ‘আমার মনে হয়েছে তুমি আমাকে কথা বলতে দিতে চাও না/ আমাকে তুমি পছন্দ করো না/ আমি ভুল কিছু বলছি ইত্যাদি।’

এ বক্তব্যগুলো হলো চিন্তা, যা আমার বন্ধুর প্রতি দোষারোপ ইঙ্গিত করে। এভাবে প্রকাশ করা হলে বন্ধুটি বিব্রত বোধ করতে পারে এবং তখন দুইজনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি শুধু অনুভূতি প্রকাশ করা হয়, তাহলে বন্ধুটি রতনের মানসিক অবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে এবং তার প্রয়োজন অনুযায়ী আচরণ করার চেষ্টা করতে পারবে।

যোগাযোগের সময় নিজেরচিন্তা ও অনুভূতির মধ্যে পার্থক্য করতে এবং অন্যের অনুভূতি চিহ্নিত করার সুবিধার্থে এবার আমরা নিচের ছকটি পূরণ করি। নিচের ছকের বক্তব্যগুলোর মধ্যে কোনটি অনুভূতি এবং কোনটি চিন্তা প্রকাশ করছে তা শনাক্ত করি। দুটি  নমুনা উত্তর দেওয়া হলো :

ছোট দলে আলোচনা করে ছকটি পূরণ করি এবং কাজ শেষে অন্য সহপাঠীদের সাথে মিলিয়ে নিই।

৩. চিন্তা ও অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত প্রয়োজন

আমরা যত ধরনের যোগাযোগ করি না কেন, প্রতিটি যোগাযোগের পেছনেই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। কখনো উদ্দেশ্যটি শুধু আমার, কখনো যার সাথে যোগাযোগ করছি তার, কখনো বা দুজনেরই। যেকোনো অনুভূতি, চিন্তা ও আচরণের ক্ষেত্রে কিছু প্রয়োজন থাকে, যা অনেক সময়ই আমাদের কথাবার্তা বা আচরণে সচেতনভাবে প্রকাশ নাও পেতে পারে।

লক্ষ রাখব, এখানে প্রয়োজন বলতে শুধু কোনো বস্তুগত জিনিস পাওয়া বোঝানো হয়নি। কোনো বস্তুগত জিনিস পাওয়ার মাধ্যমেও আমরা কোনো না কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক প্রয়োজন পূরণ করতে চাই। যেমন, খাদ্য একটি বস্তুগত জিনিস। খাদ্য গ্রহণের পেছনে আমাদের শারীরিক প্রয়োজন হতে পারে সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্বাদ ইত্যাদি। খাদ্য গ্রহণের পেছনে আমাদের মানসিক প্রয়োজন হতে পারে তৃপ্তি, প্রিয়জনের সঙ্গ, আড্ডা ইত্যাদি। যখন এ ধরনের মানসিক প্রয়োজন পূরণ হয়, তখন আমাদের ভালো লাগে। আর যখন তা পূরণ হয় না তখন আমাদের ভালো লাগে না।

দুইটি উদাহরণ : বিরতির সময়ে বন্ধুদের এক সাথে বসে গল্প করতে দেখে লাবণ্য তাদেরকে খেলতে ডাকল, ‘চলো সবাই মিলে খেলি'। এতে বন্ধুরা রাজি হয় ও তারা খেলা শুরু করে। এতে লাবণ্য অনেক খুশি হয় এবং তার সাথে খেলার জন্য বন্ধুদের ধন্যবাদ জানায়।

এ ঘটনায় বন্ধুরা লাবণ্যের ডাকে সাড়া দিলে তার মধ্যে যেসব চিন্তা আসে : ‘বন্ধুরা আমাকে পছন্দ করে'; ‘আমার সাথে মিশতে চায়’; ‘আমি বন্ধুদের সাথে খেলতে পছন্দ করি' ইত্যাদি। আর তার মধ্যে যে অনুভূতি হয় তা হলো ‘খুশি’। এ চিন্তা ও অনুভূতির পেছনে লাবণ্যের যে প্রয়োজন ছিল : সবাই মিলে আনন্দ করতে চাই, বন্ধুত্ব করতে চাই, বন্ধুদের সম্পর্কে জানতে চাই, সম্পর্ক ভালো করতে চাই ইত্যাদি। কিন্তু লাবণ্য এ প্রয়োজনগুলো মুখে বলে প্রকাশ করেনি, শুধু বলেছিল ‘চলো সবাই মিলে খেলি'। তবু প্রয়োজন পূরণ হয়ে যাওয়াতে তার মধ্যে যে ভালো লাগার মতো অনুভূতি তৈরি হয়, তা হলো খুশি।

রতনের ঘটনাটি আবার খেয়াল করলে আমরা দেখব, দলগত কাজ করার সময় রতনের বন্ধু ওর কথার মাঝে কথা বললে রতনের মনে চিন্তা আসে ‘বন্ধু আমাকে কথা বলতে দিতে চায় না' বা আমি কোথাও ভুল করছি'। এতে সে বিরক্তি অনুভব করে। রতন তখন বন্ধুকে বলে ‘আমার কথা শেষে তোমার মতামত দিও” । এক্ষেত্রে রতনের চিন্তা ও অনুভূতির পেছনে আরও রয়েছে : আমি যেন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারি, বন্ধু যেন আমাকে বোঝে, সহায়তা করে, সম্মান করে ইত্যাদি আরও কিছু প্রয়োজন। কিন্তু রতন শুধু বলেছিল ‘আমার কথা শেষে তোমার মতামত দিও'। এটা বলে নিয়ে ‘আমার কথা শেষ করতে সহায়তা করো' বা ‘দলগত কাজে অংশগ্রহণ করতে চাই, তাই আমাকে কথা বলতে দাও'। এখানে রতনের প্রয়োজন পূরণ না হওয়ায় যে অনুভূতি তৈরি হয়,তা হলো বিরক্তি। রতন যেভাবে তার প্রয়োজন প্রকাশ করতে পারত : ‘যখন তুমি ৩-৪ বার আমার কথার মাঝে কথা বলছিলে, তখন আমি বিরক্ত হয়েছি। কারণ আমি কথা শেষ করতে চেয়েছিলাম। আশা করেছিলাম তুমি তা বুঝবে ও কথা শেষ করতে সহায়তা করবে। তাই, যখন আমাদের এই প্রয়োজনগুলো পূরণ হয়, তখন আমরা ভালো বোধ করি, যেমন : খুশি, সন্তুষ্টি, শান্তি, গর্ব ইত্যাদি। আর তা না হলে আমাদের মধ্যে কিছু অপ্রত্যাশিত অনুভূতি তৈরি হতে পারে, যেমন : রাগ, কষ্ট, ভয়, অসহায়, একাকীত্ব, হতাশা ইত্যাদি।

                                                                                 যোগাযোগে প্রয়োজনের নমুনা
ভালো থাকা সংক্রান্তপারস্পরিক সম্পর্ক সংক্রান্তনিজেকে প্রকাশ সংক্রান্ত

পুষ্টি 

তৃপ্তি

সুস্থতা

বিশ্ৰাম

বিনোদন

ঘুম

নিরাপত্তা

আরাম

শান্তি

আস্থা

বিশ্বাস

প্ৰশান্তি

ভালোবাসা

স্নেহ

যত্ন

সম্মান

উদারতা

গুরুত্ব

স্বীকৃতি

সাহায্য/সহায়তা

গ্রহণযোগ্যতা

সহমর্মিতা

বোঝা

বন্ধুত্ব

প্ৰশংসা

কৃতজ্ঞতা

সাফল্য

উদযাপন

স্বনির্ভরতা

স্বাধীনতা

পছন্দ

মজা

স্বতঃস্ফূর্ততা

সততা

আত্মবিশ্বাস

 

 

৪. প্রয়োজন পূরণের উপায়

পর্যবেক্ষণ, অনুভূতি ও প্রয়োজন প্রকাশের পরে যোগাযোগের শেষ ধাপে আমাদের প্রয়োজনগুলো কোন উপায়ে পূরণ করতে চাচ্ছি তা ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে যে দুটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো :

• নিজের প্রয়োজন বোঝা এবং ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করা

• অন্যের প্রয়োজন বোঝা এবং সে অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করা

প্রয়োজন পূরণের উপায় যাতে সুনির্দিষ্ট হয়, তাই প্রকাশের সময় কিছু বিষয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে :

• কী চাই

• কার থেকে চাই

• কখন চাই

• কোথায় চাই

যেমন, পূর্বে উল্লেখ করা রতনের ঘটনায় সে যেভাবে তার প্রয়োজন পূরণের উপায় প্রকাশ করতে পারত : ‘যখন তুমি ৩-৪ বার আমার কথার মাঝে কথা বলছিলে, তখন আমি বিরক্ত হয়েছি। কারণ আমি কথা শেষ করতে চেয়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম তুমি তা বুঝবে ও কথা শেষ করতে সহায়তা করবে। আমি চাই আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করো এবং তারপরে তোমার মতামত দিও।

ঘটনা অনুযায়ী প্রয়োজন প্ৰকাশ

নিচের ঘটনাগুলো পড়ি এবং প্রতিটি ঘটনায় চরিত্রগুলো কীভাবে ইতিবাচকভাবে তাদের প্রয়োজন পূরণ করার উপায় প্রকাশ করতে পারে তা উল্লেখ করি। প্রথম ঘটনাটির নমুনা উত্তর দেওয়া হলো।

ঘটনা ১

দলগত কাজ করার সময় রতনের পাশের বন্ধু তার কথার মাঝে কয়েকবার কথা বলল। রতনের মনে হলো তার বন্ধু তাকে কথা বলতে দিতে চায় না বা সে কোথাও ভুল করেছে। সে বিরক্ত বোধ করল। রতন তখন বন্ধুকে বলল ‘আমার কথা শেষে তোমার মতামত দিও'। রতন কীভাবে বন্ধুকে তার প্রয়োজন পূরনের কথা জানাতে পারে?

চরিত্র                                                            প্রয়োজন পূরণ করার উপায় প্রকাশ
পর্যবেক্ষণঅনুভূতিপ্রয়োজনপ্রয়োজন পূরণের উপায়
রতনযখন তুমি ৩-৪ বার আমার কথার মাঝে কথা বলছিলেতখন আমি বিরক্ত হয়েছি কারণ আমি কথা শেষ করতে চেয়েছিলাম। আশা করেছিলাম তুমি তা বুঝবে ও কথা শেষ করতে সহায়তা করবে।আমি চাই আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর এবং তারপরে তোমার মতামত দিও।

ঘটনা ২

নিরা আর অতুল প্রায়ই এক বেঞ্চে বসে ক্লাস করে। আজকে নিরা দেখল যে অতুল তার পাশে না বসে অন্য একজনের সাথে বসেছে। এতে নিরা অনেক রাগ করে এবং কষ্ট পায়। অতুল টিফিনের সময় নিরাকে ডাকলেও সে অন্যদিকে চলে যায় এবং সারাদিনে অতুলের সাথে কথা বলে না। নিরার এ আচরণ অতুল বুঝে উঠতে পারে না এবং এ নিয়ে কষ্ট পায় ।

নিরা ও অতুল একে অন্যকে কীভাবে তাদের প্রয়োজন পূরণের কথা জানাতে পারে?

চরিত্র                                                            প্রয়োজন পূরণ করার উপায় প্রকাশ
পর্যবেক্ষণঅনুভূতিপ্রয়োজনপ্রয়োজন পূরণের উপায়
নিরা    
অতুল    

ঘটনা ৩

মনির তার পরিবারবিষয়ক কিছু ব্যক্তিগত কথা শুভর কাছে বলে। পরদিন ক্লাসে এসে মনির দেখে কয়েকজন সহপাঠী তার ওই ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছে। এতে সারাফ বিব্রতবোধ করে এবং রেগে যায়। টিফিন পিরিয়ডে শুভকে সামনে পেলে সে বলে ‘আমার ব্যক্তিগত কথা অন্যদের বলে দিয়ে তুমি ঠিক করলে না’।

মনির কীভাবে শুভকে তার প্রয়োজন পূরণের কথা জানাতে পারে?

চরিত্র                                                            প্রয়োজন পূরণ করার উপায় প্রকাশ
পর্যবেক্ষণঅনুভূতিপ্রয়োজনপ্রয়োজন পূরণের উপায়

মনির

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

   

ঘটনা ৪

সামিয়া কথা বলার সময় প্রায়ই তার বন্ধুদের ঘাড়ে হাত রেখে কথা বলে। বীণা সামিয়াকে তার কাছের বন্ধু মনে করলেও সামিয়া যখন তার ঘাড়ে হাত রেখে কথা বলে তখন সে অস্বস্তি বোধ করে। এ ব্যাপারে সে সামিয়াকে কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারে না। তার ভয় হয় যদি সামিয়া কষ্ট পায়। কিন্তু বীণা চায় সামিয়া (যাতে তার ঘাড়ে হাত রেখে কথা না বলে এবং এই কারণে যাতে তাদের বন্ধত্বে সমস্যা না হয় ।

বীণা কীভাবে সামিয়াকে তার প্রয়োজন পূরণের কথা জানাতে পারে?

চরিত্র                                                            প্রয়োজন পূরণ করার উপায় প্রকাশ
পর্যবেক্ষণঅনুভূতিপ্রয়োজনপ্রয়োজন পূরণের উপায়

বীণা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

   

এবার পূরণ করা ছকগুলো নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করি এবং আলোচনার ভিত্তিতে কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে তা করি।

ভূমিকাভিনয়:

আমার যেকোনো একজন বন্ধুর সাথে জোড়ায় ভূমিকাভিনয় করার পরিকল্পনা করি। দুজনই আলাদা আলাদাভাবে একটি করে পরিস্থিতির কথা চিন্তা করি যেখানে আমাদের যোগাযোগে পরিবর্তন আনতে চাই। এ পরিস্থিতি আমার ঘরের ও বাইরে যেকোনো মানুষের সাথে হতে পারে। সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তির সাথে যেই পরিস্থিতিতে আমি যোগাযোগ করি বা করতে চাই সেই বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ, অনুভূতি, প্রয়োজন ও প্রয়োজন পূরণের জন্য এখন পর্যন্ত যা করেছি তা বন্ধুকে জানাব। এখন আমার বন্ধু ওই ব্যক্তির ভূমিকাভিনয় করবে এবং ওই ব্যক্তির সাথে আমি কীভাবে ৪টি ধাপে যোগাযোগ করতে চাই তা অভিনয়ের মাধ্যমে প্ৰকাশ করবে। একইভাবে আমার বন্ধুও তার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাকে জানাবে, আমিও সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির ভূমিকাভিনয় করব এবং আমার বন্ধু ৪টি ধাপে যোগাযোগে তার প্রয়োজনের উপায় প্রকাশ করবে। শিক্ষক আমাদের ভূমিকাভিনয়ের কাজটি আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দেবেন।

দৈনন্দিন যোগাযোগে প্রয়োজন পূরণের পরিকল্পনা

আমার দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো দুটি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করি, যেখানে আমার চিন্তা ও অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত যে প্রয়োজন তা পূরণ হচ্ছে না। নিচের ছকে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমার পর্যবেক্ষণ, অনুভূতি, প্রয়োজন এবং কীভাবে প্রয়োজন পূরণের উপায় প্রকাশ করতে পারি তা উল্লেখ করি। প্রয়োজনে আমার শিক্ষক, বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে ছকটি পূরণ করি।

কার সাথে যোগাযোগ                                                         পরিস্থিতি ০১
পর্যবেক্ষণঅনুভূতিপ্রয়োজনপ্রয়োজন পূরণের উপায়

 

 

 

 

 

 

 

 

    
কার সাথে যোগাযোগ                                                         পরিস্থিতি ০২
পর্যবেক্ষণঅনুভূতিপ্রয়োজনপ্রয়োজন পূরণের উপায়

 

 

 

 

 

 

 

 

    

 

দৈনন্দিন যোগাযোগে প্রয়োজন পূরণের চর্চা রেকর্ড করি

দৈনন্দিন জীবনে পরিস্থিতি অনুযায়ী কীভাবে প্রয়োজন পূরণের চর্চা করতে পারি তা নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা কিছু অনুশীলনী ও পরিকল্পনা করেছি। যে ৪টি ধাপে যোগাযোগে পর্যবেক্ষণ, অনুভূতি, প্রয়োজন চিহ্নিত করে প্রয়োজন পূরণের উপায় ইতিবাচকভাবে প্রকাশ করার কৌশল আমরা শিখেছি, এখন থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সেই ধাপগুলো অনুশীলন করার চেষ্টা করব। অনুশীলন করার মধ্য দিয়ে এ কাজে আমরা দক্ষ হয়ে উঠব যা ভালো থাকতে আমাদের সাহায্য করবে।

অনুশীলন করতে গিয়েই আমি বুঝব যে কোন ধাপটি ভিন্নভাবেও করা যেতে পারে। তাই আমাদের অনুশীলনগুলো যদি যদি ডায়েরিতে করে রাখি, সময়ের সাথে সাথে নিজের যোগাযোগে কোন দিকগুলোতে ভালো করছি এবং কোথায় পরিবর্তন আনতে হবে তা সহজে বুঝতে পারব। এক মাসের জন্য নিচের ছক অনুযায়ী প্রয়োজন পূরণের চর্চা ডায়েরিতে লিখে রাখি। প্রয়োজনে আমার শিক্ষক, বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করি।

 

আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন

নিচের ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণক রবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমার অগ্রগতি সম্পর্কে আমি ধারণা লাভ করব। আমি নিজে আমাকে উৎসাহ দেব এবং কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। আমার অভিভাবক ও শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দেবেন। কী ভালো করেছি এবং কীভাবে আরওভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন। এর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষক ধারণা দেবেন। কীভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আরও ভালো করতে পারি সেই উপায় জানাবেন।

শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে আমার কাজগুলো মান অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে তারকা বা স্টার দিয়ে মূল্যায়ন করবেন।

ছক ১ : আমার অংশগ্রহণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে করা কাজ

সেশন নং অংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে শ্রদ্ধাশীল আচরণঅংশগ্রহণের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্কের প্রতি সচেতনতা ও গুরুত্ববইয়ে সম্পাদিত কাজের মান
সেশন ১নিজের রেটিং   
মন্তব্য   
শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   
সেশন ২নিজের রেটিং   
মন্তব্য   
শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

৩-১১

নিজের রেটিং   
মন্তব্য   

সেশন

১২

শিক্ষকের রেটিং   
মন্তব্য   

 

ছক ২ : আমার যোগাযোগের চর্চা

 যোগাযোগের চর্চাসংক্রান্ত পরিকল্পনার যথার্থতাযোগাযোগের চর্চাসংক্রান্ত অনুশীলনগুলো জার্নালে লিপিবদ্ধকরণঅনুশীলনে যোগোযোগের চারটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ
নিজের রেটিং

 

 

  
মন্তব্য

 

 

  
অভিভাবকের মন্তব্য

 

 

  
শিক্ষকের রেটিং

 

 

  
মন্তব্য

 

 

  
Content added || updated By